Download Free Audio of নিশাচর... নিশ�... - Woord

Read Aloud the Text Content

This audio was created by Woord's Text to Speech service by content creators from all around the world.


Text Content or SSML code:

নিশাচর... নিশাচর কাদের বলে জানো !! যাদের নিশি তে অবাধ বিচরণ ..যেমন পেঁচা,বাদুড়, প্রভৃতি .. কিন্তু এরা ছাড়াও আরো যে কিছু আছে যাদের নিশি তে অবাধ বিচরণ !! তা কিন্তু মানুষের অলক্ষে ... এই অতি প্রাকৃতিক জগৎ তে এমন অনেক কিছুই আছে, যা মানুষ খালি চোখে দেখতে পায় না ... আর যা দেখে তা আমাদের "মনের ভুলের" স্বীকৃতি পায়... হ্যাঁ সবই মনের ভুল... আলো আর অন্ধকারের মধ্যে যে একটা বিস্তর ফারাক আছে তা মানুষ মানতে চায় না ... কিন্তু তা মানে নিশাচরেরা..... সাল টা 2018, তখন সবে বিয়ে করেছি, পাঁশকুড়া লাইনে একটি ছোট্ট গ্রামে আমার শ্বশুরবাড়ি ... গ্রামের নাম টা নাই বা জানলেন... অবশ্য এটা নিষ্প্রয়োজন তাই আর বললাম না ... প্রথম বছর জামাইষষ্ঠী, তাই অফিস থেকে তিন দিনের ছুটি নিয়ে পৌছে গেলাম জামাই হওয়ার স্বর্গীয় সুখের লোভে... আমার শ্বশুরবাড়ি যে গ্রামে অবস্থিত, সেই গ্রাম টি বেশ সুন্দর .. বেশিরভাগ জমিতে হরেক রকম ফুলের চাষ .. তা ছাড়াও ধানক্ষেত, পুকুর, খড়ের ছাউনি দেওয়া মাটির বাড়ি ... মাটির মেঠো মেঠো গন্ধ ... উফ্ এক কথায় অসাধারণ ... আর সব থেকে অসাধারণ হচ্ছে জামাই আদর !! ... একদিন আগেই যখন শ্বশুরবাড়ি তে পৌছলাম তখন আদরের আর শেষ নেই .. চারি দিকে গাছপালা দিয়ে ঘেরা আমার শ্বশুরের ভিটে বাড়ি ... সন্ধ্যার পর মাটির দালানে বসে তালশাঁস খাচ্ছি , একটু দূরে পোস্টের আলো টা হাওয়া তে দুলছে.. প্রকৃতির ঠান্ডা বাতাসে মন প্রাণ ভরে যাচ্ছে। হঠাত্ দালানের পাশেই ঝুম ঝুম করে নূপুরের শব্দ কানে ভেসে এলো !! আমার বউয়ের দিকে চেয়ে বললাম পায়ে নুপুর পরেছো নাকি... সে সলজ্জে বললো কই না তো....তা হলে নূপুরের আওয়াজ পেলাম যে..... !! কথা টা শেষ হতে না হতেই দেখি একটা স্পষ্ট ভয়ের ছাপ ফুটে উঠেছে আমার রমণীর মুখের উপর ... সঙ্গে সঙ্গে সে বলে উঠলো, চলো.. চলো ভেতরে যাই ...ব্যাপার কি? বেশ তো দালানে বসে প্রাকৃতিক হাওয়া খাচ্ছি, হঠাত্ ঘরের ভেতরে কেন ? কথা টা শেষ হল না, এবার বেশ জোরে ঝুম ঝুম ঝুম শব্দে চমকে উঠলাম ..আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে "ওওওও মাগো" চিৎকারে আমি ঘাবড়ে গেছি ততক্ষণে ... অনু কে দেখি দরজার আড়ালে গিয়ে থরথর করে কাঁপছে .. আমিও একটু ভয় পেয়ে গেছি সেই পরিস্থিতি তে ..... রাতে খেতে বসে, ব্যাপার টা একটু শুনেই হো হো করে হেসে উঠলাম... এই যুগে দাঁড়িয়েও গ্রামের লোকজন ভূত প্রেতে বিশ্বাস করে !! আমার শাশুড়ির মা বলে উঠলেন.... ""হেসো না বাবা, আজ থেকে ছয় সাত মাস আগে অনুর বান্ধবী উমা পুকুরে ডুবে মারা যায় .... বডি ফুলে ভেসে ওঠে ছিল ওই সামনের পুকুরে, মাছে ওর পায়ের নূপুরে খোবলা ছিল...যারা ওর বডি পুকুর থেকে তোলে, তারা বলে নূপুরের কি আওয়াজ"" !! .. ""তার পর থেকে গ্রামের সবাই সেই নূপুরের ঝুম ঝুম শব্দ প্রায় শোনে.... ও এখন নিশাচর বাবা"" .... রাত তখন বেশ গভীর, পাশে আমার বউ অঘোরে ঘুমাছে ... মাথার উপরের জানলা টি খোলা ...তা দিয়ে চাঁদের আলো, সামনে একটা গাছ কে তেরচা ভাবে কেটে ঘরে ঢুকছে....ঘরের ভেতরের লাল নাইট লেম্পের আলো টা কেমন ঘোলাটে দেখাছে !!............ ইস্ !! ঘুম কিছুতেই আসছে না , হঠাত্ ফোনের ক্যামেরা টা অন্ করে চাঁদের কটা পিক তোলার চেষ্টা করলাম !! কিন্তু না, ফটোগ্রাফার হওয়ার চেষ্টা বৃথা গেল। ছবি গুলো অন্ধকারে ঠিক মত উঠলো না... ছবি গুলো নাড়িয়ে-চারিয়ে দেখছি ! হঠাত্ গাছের একটা ছবি তে একটা আবছা ছায়া মূর্তি দেখে, শরীরের রক্ত হিম হয়ে গেল। ভালো ভাবে দেখলাম হাল্কা একটা স্যালুয়েড মূর্তি যেন দাঁড়িয়ে আছে সামনের নারকেল গাছের আড়ালে !! .... কাঁপতে কাঁপতে বসে পরলাম বিছানায় ! গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে !! মন কে বোঝাছি .... না ওই সব আমি বিশ্বাস করি না !! .... সাহসে ভর করে উঠে দাঁড়ালাম, ব্যাপার টা আমাকে দেখতেই হবে .. বলে দরজা খুলে সোজা গাছের সামনে গেলাম.... কই কোথায় তো কিছু নেই ...!! মনে মনে নিজেকে বেশ সাহসী মনে করছি তখন.. অনেক দূরে হঠাত্..... হুহুহুহুওও করে শব্দে চমকে উঠলাম !! বুঝলাম এ শিয়ালের ডাক .... নিশুতি গ্রাম একেবারে খাঁ খাঁ করছে.... ঝিঝি পোকা অবিশ্রান্ত ভাবে ডেকে চলেছে .. কেন জানি না হঠাত্ আমার শরীর টা কেমন ভারী হয়ে গেল !! হঠাত্ ঠিক আমার পেছনে "ঝুম ঝুম" করে শব্দ হল.. স্পষ্ট উপলব্ধি করলাম, ঠিক আমার পেছনে কোন এক অশরীরী আত্মার উপস্থিতি .... শরীরের লোম খাড়া হয়ে গেছে, পা দুটো থরথর করে কাঁপছে ... ভয়ে ভয়ে পেছন ফিরতেই আবার সেই "ঝুম ঝুম" শব্দ টা আমার সাথে সাথে তখন পেছনে চলে গেছে... পা দুটো পাথরের মতো ভারি হয়ে গেছে...চিৎকার করতে পারছি না ... এবার একটা খিন্ করে হাসির শব্দ ঠিক আমার কানের সামনে.... সেই মেয়েলি হাসি তে আমার শিঁড়দাড়া দিয়ে ঠান্ডা রক্তের স্রোত বয়ে গেল !! বেশ বুঝতে পারলাম আমার হাত টা কাঁপতে কাঁপতে আমার ফোন টা হাত থেকে পরে গেল ... এবার শুরু হল এক পৈশাচিক ভৌতিক খেলা... ঝুম ঝুম শব্দ টা আমাকে ঘিরে গোল চক্রাকারে ঘুরতে শুরু করলো .. আমি ভয়ে কুঁকড়ে গেছি, আমার বুকের ভেতর টা কেমন খালি খালি লাগছে !! সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে !! কাঁপতে কাঁপতে বসে পরলাম মাটির উপর.. এবার কানে আসছে এক পৈশাচিক হাসি.... সে হাসি সারা শরীরের রক্ত হিম করে দেয়.... হে ঈশ্বর তুমি মঙ্গলময়...তুমি রক্ষা করো....!! ঝুম ঝুম শব্দ টা আমাকে ঘিরে চক্রাকারে ঘুরে চলেছে , চোখের সামনে টা আস্তে আস্তে অন্ধকার নেমে আসছে... আধ বোঝা চোখে একটা ছায়া মূর্তি আমাকে ঘুরছে !! সে কি বিভৎস্য সে কি পৈশাচিক মুহূর্ত !! আমি আর চোখ খুলে রাখতে পারছি না.... দেখতে দেখতে মাটিতে লুটিয়ে পরলাম আমি ..... জলের ঝাপটা আর অনুর কান্নার শব্দে যখন চোখ খুললাম তখন আমি মাটি তে শুয়ে, সারা শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে ... শাশুড়ি মা কাঁদতে কাঁদতে বলছেন ...বাবা বলে ছিলাম ওরা নিশাচর...