Read Aloud the Text Content
This audio was created by Woord's Text to Speech service by content creators from all around the world.
Text Content or SSML code:
একেই কি বলে সভ্যতা? প্রহসন এর নামকরণের সার্থকতা আলোচনা কর। শিল্প-নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একজন শিল্পী যখন তার সাহিত্যে নামকরণ করেন তখন তিনি খুব যন্ত্রণা করে তা করে থাকেন। কেননা একটি সাইটে নামকরণই হলো তার ভেতরে প্রবেশের চাবিকাঠি। সাহিত্যের নাম পড়ে আমরা তার অন্তর্গত বিষয় সম্পর্কে অনুমান করতে পারি। আমাদের আলোচ্য "একেই কি বলে সভ্যতা "প্রহসন এর নামকরণ এর ক্ষেত্রেও আমরা একই কথা বলতে পারি। " একে কি বলে সভ্যতা"? প্রহসনে লেখক মাইকেল মধুসূদন দত্ত সেকালের কলকাতার এক শ্রেণীর উচ্ছঙমল যুবকের ছবি চিত্রায়িত করেছেন। এই যুবকের মদ মাংস খেয়ে ঢলা-ঢলি করাকে সভ্যতার লক্ষণ বলে মনে করে। অবসানের শেষ দুটি বাক্য হল- "মদ মাংস খেয়ে ঢলা-ঢলি কলেলই কি সব হয়?-একেই কি বলে সভ্যতা"? এই শেষ উক্তিটি সাহায্যেই প্রহসনটির নামকরণ করা হয়েছে। উক্তিটি শুধু নবকুমারের দুর্ভাগিনী নয়-এ যেন নাটকের জ্বলন্ত জিজ্ঞাসা আধুনিক সভ্যতা যে বিকৃত অবস্থা তা বোঝার জন্যই নাটকের সুকৌশলে এই জিজ্ঞাসা চিহ্ন ব্যবহার করেছেন।' জ্ঞান তরঙ্গিনী সভায় 'গিয়ে নবকুমার এবং তার বন্ধুরা আকন্ঠ মদ্যপান করেছে, গো মাংস খেয়েছে এবং বারাঙ্গনা নিয়ে নাচ গানও স্ফূর্তি করেছে। এই সভায় নবকুমার বলে যে তারা শেখ কলেজ সেকেলে চিন্তাভাবনা ত্যাগ করে আধুনিক হবে। সে জানায় তারা তাদের বিদ্যা বলে সমস্ত রকমের কুসংস্কার থেকে নিজেদের মুক্ত করবে। ভাষায় জেন্টলম্যান আমাদের সকলের হিন্দু কুলে জন্ম কিন্তু আমরা বিদ্যা বলে সুপেরস্টিশন শিকলি কেটে ফ্রি হয়েছে, আমরা পুত্তলিকা দেখে হাঁটুন ওয়াদেয়ার স্বীকার করিনি, দোয়ারা আমাদের অজ্ঞান অন্ধকার দূর হয়েছে.... এদেশে সোসিয়াল রিফর্মেশন যাতে হয় তার চেষ্টা করো।" এছাড়াও নবকুমার আরো বলে যে আমাদের এ দেশের মেয়েদের শিক্ষিত করে তুলতে হবে তাদের স্বাধীনতা দিতে হবে। সমাজের জাত পাতের ভেদাভেদ দূর করতে হবে। বিধবাদের বিভা দিতে হবে আর এইসব কিছু হলে আমাদের দেশ ইংল্যান্ডের মতো সভ্য হয়ে উঠবে। নবকুমার তার কথায় কিছু ভালো কথা বললেও এসব তারা কতটা বিশ্বাস করত তা নিয়ে আমাদের মনে সন্দেহ জাগে। কারণ সভায় এর পরে আমরা দেখতে পাই বেশ্যাদের আসা এবং সবার মদ খেয়ে মাতলামি করা। এসবই তারা করেছে আধুনিক সভ্যতার নামে ।এদের না ছিল কোন উচ্চ আদর্শ না ছিল জ্ঞান স্পৃহা, ছিল উচ্চ ধরনের প্রতিভা। সংস্কারের নাম করে তারা অবাধে চালিয়েছে স্বেচ্ছাচার লাম্পট্য ও মদ্যপান। ইংরাজী সভ্যতা ও সংস্কৃতির আলোচকক উদ্ভাসিত ইয়ং বেঙ্গল দলের অক্ষম অনুকারী এরা। এরা ছিল স্বল্প শিক্ষিত আদর্শহীন, এবং ভোগ-বিলাসে মত্ত। ধ্বনি পিতার সন্তান হিসেবে এদের হাতে ছিল ওদের অর্থ এবং সেই অর্থ তারা ব্যয় করেছে অসংযত জীবনাচরণে। মদ মাংস ভক্ষণ কি তারা জীবনের পরমার্থ বলে মনে করত এবং বেশ্যাগমনকে তারা আধুনিক সভ্যতার অঙ্গ বলে বিশ্বাস করত। রাজনারায়ণ বসু তাঁর 'সেকাল ও একাল'গ্রন্থে বলেছেন "যেমন পান্দশ বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি বেশ আগমন ও বৃদ্ধি পাইতেছে। ইহা কিন্তু সভ্যতায় চিত্র"। রাজনারায়ণ যেসব হত্যার কথা বলেছেন তা বিকৃত সভ্যতা। কারণ পানদোষ ওবেশাগমন গমন করলে কখনো প্রকৃত সভ্যতার চিহ্ন হতে পারে না। নবকুমার ও তার দলবল বাইরের এই উৎশৃংখলতা ও বেলেল্লাগিরিকে অন্দরমহলে ও টেনে এনেছে। মদ্যপ নবকুমার একদিন বাড়িতে নিজ ভগ্নিকে সাহেবদের অনুকরনে চুম্বন করেছে। বৈঠকখানা ঘরে বন্ধু কালিনাথ কি মদ খেতে দিয়েছে। নাটকের শেষ দৃশ্যের দেখা গেছে মদের নেশায় চুর হয়ে সকলের সামনেই 'মদলজ 'ও বলে চিৎকার করেছে এবং নিজ স্ত্রীকে 'পয়োধরী'বলে সম্বোধন করেছেন। আরে এই কীর্তি দেখে তার বোন মৃত্যকালে ক্ষোভের সঙ্গে বলেছে "ও মা ছি। ইংরেজি পরলে কী লোভাটো বেহায়া হয়ে গ হয় গো"। ইংরেজি শিখলে কেউ মাতাল হয় না বা অধঃপাতে যায় না। কিন্তু নৃত্য কালি ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত দুশ্চরিত্র মাতাল নবকুমারের চরিত্র কে চোখের সামনে দেখেছে তাই তার মনে হয়েছে ইংরেজি শিক্ষার দাদাকে অধঃপতনের এই শেষ ধাপে নামিয়েছে। এই শ্রেনীর চরিত্র তাদের দাম্পত্য জীবনকে কিভাবে কলুষিত ধ্বংস করেছে তা হল কামিনীর একটি উক্তিতে প্রস্ফুটিত অসহায় নারীর জীবন যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে বলেছে "এই সব দেখে শুনে আমার ইচ্ছে করে যে গলায় দড়ি দিয়ে মরি।"তার শেষতম উক্তি "মদ মাংস খেয়ে ঢলা-ঢলি করলে কি সব হয়? একেই কি বলে সভ্যতা"? তার এই সংক্ষিপ্ত সারগর্ভ উচ্চকিত উক্তি উদ্যতী ক্ষমধার বর্ষাফলকের মত যেন এই ভয়াবহ বিকৃত সভ্যতাকে বিদ্ধ করতে চাইছে। এখানেই "একেই কি বলে সভ্যতার " নামকরণের সার্থকতা।